আজ ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রংপুরে আমনের পাম্পার ফলনঃ ধান কাটতে শ্রমিক সংকট

রংপুরে আমনের পাম্পার ফলন ধান কাটতে শ্রমিক সংকট


মোঃইনামুল হক, রংপুর প্রতিনিধিঃ

রংপুর কৃষি প্রধান হওয়ায়, জেলায় পুরোদমে আমন ধানকাটা মাড়াইয়ের মৌসুম শুরু হয়েছে ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষক ও শ্রমিকদের। গ্রামীণ প্রকৃতির চারিদিকে তাকালে চোখে পড়ে বিস্তৃত মাঠজুড়ে যেন সোনালী চাদরে বিছিয়ে আছে পাকা ধানের মাঠ। মাঠজুড়ে ধান কাটার ধুম পড়েছে কৃষকদের। তবে দ্রব্যমূল্যের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতি বছর শ্রমিকদের মজুরি বাড়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষকরা।দৈনিক ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা মজুরিতে শ্রমিক কাজে লাগানো মধ্যবিত্ত কৃষকদের পক্ষে বেশ কষ্টসাধ্য। রংপুর সদর,বদরগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, তারাগঞ্জ ও মিঠাপুকুরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে মাঠজুড়ে ধান কাটার ধুম পড়েছে। ভরা মৌসুমে শ্রমিকের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে মজুরি। অন্যান্য সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ মজুরি দিয়েও শ্রমিক সংকটে পড়েছে কৃষকরা।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়ঃ

রংপুরে চলতি আমন মৌসুমে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৭২৩ হেক্টর জমিতে। তবে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লক্ষ ৯৮ হাজার ৪৪ মেট্রিক টন। রংপুর জেলার মানুষের চালের চাহিদা হচ্ছে প্রায় আড়াই লক্ষ টন। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাল উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৬ লক্ষ মেট্রিক টন।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকার পাশাপাশি পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকদের জমিতে খুব বেশি সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয়নি। সময়মতো জমিতে বৃষ্টির পানি দিয়ে চারা রোপণ এবং অপেক্ষাকৃত কম সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এবার জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।বদরগঞ্জ উপজেলার
কৃষক রাকিবুল ইসলাম বলেন,” আমন ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের মজুরি বেশি। ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা ছাড়া কাম করে না। বেশি টাকা দিয়ে শ্রমিক মাঠে লাগেয়া পোষাবে না”। নিরুপায় বউ বাচ্চাদের নিয়া ধান কাটে ঘরে নিতে হচ্ছে। তারাগঞ্জ উপজেলার ৫নং সয়ার ইউনিয়নের লিটন চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলেন, “জিনিস পাতির যে দাম, আলুর দাম ৭০ টাকা, মানুষ খাইবে কি কামলার মজুরি না বাড়ায়লে” অনেক কৃষক মনে করছেন ধানক্ষেতে কাজ করা শ্রমিকের একদিনের হাজিরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। এত টাকা দিয়ে শ্রমিক নেয়া সম্ভব নয়। কাজের চাপ বেশি।

অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা বলেনঃ

আমরা চাহিদা অনুযায়ী ধান কাটার জন্য শ্রমিক পাচ্ছি না।মিঠাপুকুরের শ্রমিক ইউসুফ আলী বলেন, ধানের ফলন ভালো। কৃষক ধানের দাম পায় ভালো শুধু আমাদের মজুরি বাড়াইতে তাদের কষ্ট। সব জিনিসের দাম বেশি। সারাদিন মাঠে খাটিয়া যদি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা না পাই বউ বাচ্চা নিয়া খামো কি। এখন কাজের চাহিদা আছে, দিনে ৫০০ এর কম হাজিরা নিলে লস হয়া যাবে। আমাদের পোষানি লাগবে। চলতি মৌসুমের ধান কাটা ও মাড়াইয়ের পরপরই কৃষকরা জমিতে আলুর চারা রোপণ করবেন। আবার অনেকেই বোরো ধানের চারা রোপণ করার জন্য প্রস্তুত করবেন জমি।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, চলতি মৌসুমে অন্যান্য জেলার তুলনায় রংপুরে আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে জেলার খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মেট্রিক টন চাল অন্য জেলার চাহিদা মেটাবে আমরা আশা করছি । ধান কাটা ও মাড়াইয়ের পরপরই কৃষকরা জমিতে আলুর রোপণ করবেন এবং অনেকে বোরো ধানের চারা রোপণ করার জন্য জমি প্রস্তুত করবেন।

আরো পড়ুন


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর